November 21, 2024, 11:15 pm
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাত্তরের রণাঙ্গনের পত্রিকা বরিশালের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ’র আজ ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৫২ বছরে পদার্পন উপলক্ষে আজকের বিপ্লবী বাংলাদেশ’র মূল পত্রিকার সাথে চার পাতার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগ জুড়ে পোস্টারিং করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৪ঠা আগস্ট রণাঙ্গনে নুরুল আলম ফরিদের স¤পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’। পত্রিকাটি ছিল ট্যাবলয়েড আকারের। মূল্য ছিলো ১৫ পয়সা।
প্রথম পর্যায়ে চাপা প্রেস, বাংলাদেশ (মূলত কলকাতার ক্রান্তি প্রেস) থেকে পত্রিকাটি মুদ্রিত ও প্রকাশিত হতো। পরে ১৩৭৮ সনের ১৪ই পৌষ পত্রিকাটি হাবিব প্রেস, সদর রোড, বরিশাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ আর. এস. পি.’র প্রেসিডেন্ট ত্রিদিব চৌধুরী ও সাধারণ স¤পাদক মাখম পাল পত্রিকাটি প্রকাশে সার্বিক সহযোগিতা করতেন।
এখান থেকে ঐ সময়ে ৪/৫টি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। দীর্ঘ ২০ বছর সাপ্তাহিক হিসেবে চলার পর ১৯৯১ সালের ৯ই জুলাই থেকে পত্রিকাটি দৈনিক সংখ্যায় রূপান্তরিত হয়। এই পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা উত্তর বরিশালের সাংবাদিকতা বিকাশ লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পত্রিকাটির মোট ১৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাটির জন্ম ইতিহাস স¤পর্কে ১৯৮২ সালে ৪ঠা আগস্ট সংখ্যায় ‘পুরানদিনের কথা’ শীর্ষক রচনায় স¤পাদক নুরুল আলম ফরিদ লিখেছেন : ‘কালু ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে একটি পত্রিকা বের করার সব পরিকল্পনা নিয়ে ফেললাম। সঙ্গে সঙ্গে নামও ঠিক হয়ে গেল। ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ তখন বিপ্লবের রণাঙ্গন। সেই রণাঙ্গনের আমরাও এক সৈনিক। বিপ্লবী বাংলাদেশের যারা কর্মী তারা এক দিকে সৈনিক অন্যদিকে সাংবাদিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। অসি আর মসীর অভূতপূর্ব মিলনে যে চেতনা আমাদের মধ্যে জাগরিত হলো তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল একটি পত্রিকার মাধ্যমে যার নাম ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’।
পত্রিকার জন্য কালুভাইকে নিয়ে কলকাতা গেলাম। সেই আমার প্রথম কলকাতা যাওয়া। আমাদের পূর্ব পরিচিত অশোকদাকে খুঁজে বের করলাম। তিনি একজন শিল্পী। বিপ্লবী বাংলাদেশের নামের ডিজাইনের জন্যই অশোকদার কাছে যাওয়া। কলকাতার মনোহর পুকুর লেনে-‘ক্যানভাস’ শিল্পীগোষ্ঠীর তিনি একজন সদস্য। অশোকদা সেখানে আমাদের নিয়ে গেলেন। সেখানে ভারতীয় শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় হল। তারা পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। অশোকদা পত্রিকার নামের ডিজাইন করে দিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, অশোকদা বাংলাদেশেরই একজন শিল্পী। তিনি অনেক আগেই বরিশাল থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন।
ক্যানভাসের বন্ধুরাই যোগাযোগ করিয়েছিলেন ভারতীয় রাজনৈতিক দল আর.এস.পি. এর নিজস্ব ক্রান্তি প্রেসের সাথে। এখান থেকেই ৪ঠা আগস্ট প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। আর.এস.পি-র সর্বশ্রী প্রদীপ চৌধুরী, মাখম লাল এবং প্রেসের কর্মীদের আন্তরিকতা আমাদের সহায়ক হল। ক্রান্তি প্রেসের সংলগ্ন আর.এস.পি কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রী নির্মল সেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ সাইফুরর হমান। (খান সাইফুর রহমান) এবং বরিশালের শ্রীসুধীর সেনের সাথে দেখা হোল। তাদের সার্বিক সহযোগিতা আমাদের চলার পথের পাথেয় হল। এদের লেখা ও পরামর্শ আমাকে পত্রিকা প্রকাশে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করল। এখানে আর একজনের কথা উল্লেখ যোগ্য,
তিনি এক কালের বাংলাদেশের লেখক শ্রীসুধীর চৌধুরী। পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে তিনিও এগিয়ে এলেন আমার পাশে। তিনি হাসনাবাদেই থাকতেন। প্রথম সংখ্যাটি ছাপা শেষে ফিরে গেলাম সীমান্ত বন্দর নয় নম্বর সেক্টরের প্রাণ হাসনাবাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবির, অপারেশন ক্যা¤প আর বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চতে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যখন পত্রিকাটি পৌঁছে গেল সে এক অভূত পূর্ব দৃশ্য। সমগ্র ক্যা¤েপ ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ নিয়ে উল্লাস ধ্বনি শুরু হল।
Leave a Reply